
ঈদযাত্রায় সড়কে দীর্ঘ জট রেলে ভোগান্তি
- আপলোড সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ০৫:৪৭:০৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ০৫:৪৭:০৮ অপরাহ্ন


* টার্মিনালে ঢুকতে এবং বের হতে লাগছে কয়েক ঘণ্টা
* ঈদযাত্রায় ভোগাচ্ছে বৃষ্টি, এসি বাসে ভাড়া নৈরাজ্য
* ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে কমলাপুরে বেড়েছে যাত্রীর চাপ
* ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় ১২ স্থানে যানজটের আশঙ্কা
* ট্রেনে ফিরতি ঈদযাত্রার ১২ জুনের টিকিট বিক্রি
পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসব সামনে রেখে তৃতীয় দিনে ভিড় দেখা গেছে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। তবে ঈদযাত্রার শুরুতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখী মানুষ। রাজধানীতে যানজট থাকায় টার্মিনালগুলোতে বাস পৌঁছতে অতিরিক্ত ২-৩ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসানো, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চলাচল, সড়ক ভাঙাচোরা হওয়াসহ নানা কারণে সড়ক-মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল সোমবার আশুলিয়া সড়কে নবীনগর-চন্দ্রা এলাকায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। এতে এবার ঈদযাত্রার শুরু হয়েছে ভোগান্তি দিয়েই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তঃজেলা টার্মিনালে ঢুকতে এবং বের হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। প্রতিটি টার্মিনালের সামনের সড়কে যানজট রয়েছে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে বের হতে এবং ঢুকতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এর মধ্যে জনপথ মোড়, যাত্রাবাড়ী মোড়, শনির আখড়ায় দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। এখানে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায় বলে জানান পরিবহন চালকরা। একই সঙ্গে মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢুকতে এবং বের হতে এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালীতে যানজটে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা গাবতলী টার্মিনালেও। টার্মিনালে ঢুকতে এবং বের হতে আমিনবাজার পর্যন্ত যানজটে পড়তে হচ্ছে বলে জানান পরিবহন চালকরা। এ সড়কগুলোতে যত্রতত্র গাড়ি থামানো বন্ধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো করতে পারলে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সৃষ্ট গর্তের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। গত চার/পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে নির্মাণকাজ চলছে, এজন্য রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য গাড়িগুলো স্পিডে চলতে পারছে না। এতেই যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গতকাল সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড় বাড়লেও দুটি ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। আসন থাকার পরও সম্পূর্ণ ভাড়া আদায় শেষে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়ার অভিযোগ করেন মোহনগঞ্জগামী ট্রেনের যাত্রীরা। এদিকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তিতাস কমিউটার ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর ছেড়ে যায় ট্রেনটি। অন্যদিকে জামালপুরগামী ট্রেন জামালপুর এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর। স্টেশন ম্যানেজার মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় নেই। তবে দুটি ট্রেন দেরিতে ঢাকায় প্রবেশ করায় ফিরতি যাত্রায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন রুটে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ঈদের পরে সাতদিনের ট্রেনের আসনের টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় কেনা টিকিটগুলো যাত্রীরা রেলওয়েকে ফেরত দিতে পারবেন না। প্রতিজন টিকিটপ্রত্যাশী চারটি আসনের টিকিট একবার একসঙ্গে কিনতে পারবেন। একটির বেশি আসনের টিকিট কিনলে সহযাত্রীদের নাম টিকিট কেনার সময় লিখতে হবে।
ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গণপরিবহন ও পশুবাহী গাড়ির চাপ বাড়ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে চন্দ্রা এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সোমবার সকাল থেকে মহাসড়কে অতিরিক্ত গণপরিবহনের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার মানুষ এই চন্দ্রা দিয়ে বাড়ি যেতে হয়। ফলে প্রতি বছর এই চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। তাই সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেড়েছে গণপরিবহন ও পশুবাহী গাড়ির চাপ। এ ছাড়া উপজেলায় তিন শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। সকালে ছোট ছোট অনেক শিল্প কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে। এদিকে চন্দ্রা এলাকায় ছিনতাইকারী, ডাকাতি, মলম পার্টি সদস্যদের হাতে যেন যাত্রীরা কোনো রকম হয়রানির শিকার না হতে হয়। তার জন্য চন্দ্রা এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সকাল থেকেই যানজট নিরসনে মহাসড়কে সেনাবাহিনী সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে নাওজোড় (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সওগা তুল আলম বলেন, এবার ঈদকে ঘিরে মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে চন্দ্রা এলাকাজুড়ে ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা মহাসড়কে থাকবে।
যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির আগেই ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হচ্ছে টানা বৃষ্টিতে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দুয়ার খ্যাত গাজীপুরের চন্দ্রায় প্রায় ছয় কিলোমিটার পথজুড়ে যানজট হয়েছে। গাড়ির চাপ এবং বৃষ্টিতে সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ছিল ধীরগতি। ঈদযাত্রায় বেড়েছে এসি বাসের ভাড়া। কোনো কোনো পরিবহনে এসি বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সরকার সাধারণ বাসের ভাড়া নির্ধারণ করলেও, এসি বাসে তা ঠিক করেন মালিকরা। নন-এসি বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে কৌশলে। এসব বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম টাকা নেয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময়ে শেষ গন্তব্যের সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যেমন ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৩১০ টাকা হলেও, সাধারণ সময়ে ‘আলম এশিয়া’, ‘ইমাম’সহ বিভিন্ন বাসে ২০০ টাকা নেয়া হয়। কিন্তু সোমবার থেকে নেয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রী যেখানেই নামুন, ‘ইমাম’ শেষ গন্তব্য হালুয়াটের ভাড়া নিচ্ছে। একই চিত্র গাবতলী টার্মিনাল এলাকায়। রংপুরগামী এসি বাসের ভাড়া ছিল হাজার টাকা। ঈদে তা এক হাজার ৬০০ টাকাও নেয়া হয়েছে। একই অবস্থা খুলনা, রাজশাহীর বাসেও। কথা হয় রংপুরের যাত্রী আসাদুজ্জামান মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। কিন্তু টিকিট নেই। এসি বাসে এক হাজার ৬০০ টাকা চাইছে। এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮০০ টাকা। তবে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, এসি বাসের ভাড়ায় সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। বিলাসবহুল বাস, তাই ভাড়াও বেশি। ঈদের সময়ে ফিরতি যাত্রায় বাস খালি ফেরে। তাই খরচ পোষাতে ভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়। কিন্তু নন-এসি বাসের ভাড়া বাড়েনি।
আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ঈদের ছুটি। ঈদ হবে ৭ জুন। এ হিসেবে ঈদের আগে ছুটি মাত্র দুইদিন, ৫ জুন বৃহস্পতিবার এবং ৬ জুন শুক্রবার। ৪ জুন বুধবার শেষ কর্মদিবস। অধিকাংশ যাত্রী এই দুই দিনে যাত্রা করবেন। ঈদের আগের স্বল্প ছুটি এবং বৃষ্টির কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ব্যাপক ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। রাজধানীমুখী পশুবাহী গাড়ির ভিড়, মহাসড়কের আশপাশের হাটও হবে ভোগান্তির কারণ। আগামী ৪ জুন অফিস, আদালত, কলকারখানাসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে ছুটি হবে। যাত্রী যান সঙ্কট এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে ব্যাপক ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১২টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা সাজাচ্ছে প্রশাসন। কোরবানির ঈদের আগে মহাসড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সহায়তা করবে। এ ছাড়া বিআরটিএ, বাস মালিক সমিতি, বাজার কমিটির প্রতিনিধি, রোভার স্কাউটের সদস্যরাও মনিটরিং টিমে অংশগ্রহণ করবেন। গত রোববার কুমিল্লা জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সম্ভাব্য জায়গাগুলোর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজার ও ইলিয়টগঞ্জ বাজার, চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার ও চান্দিনা বাজার (বাগুড়), বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কংশনগর বাজার, আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট মোড় ও আলেখার চর, সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্ব রোড, সুয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি ইউ টার্ন এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের মোট ২৬টি স্থানকে গুরুত্ব দিয়ে এবারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১২টি জায়গাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়কের কোথাযও যেন কোরবানির পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি কিংবা রাতের মহাসড়কে যেন কোনো ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
?পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে ফিরতি যাত্রাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ রেলওয়ে আজ বিক্রি করছে আগামী ১২ জুনের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। সোমবার সকাল ৮টায় বিক্রি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসনের টিকিট। এবং দুপুর ২টায় বিক্রি শুরু হবে পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলোর আসনের টিকিট। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবারও শতভাগ আসন অনলাইনে বিক্রি করা হবে। ?ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের নেয়া কর্মপরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেনের ৯ জুনের আসনের টিকিট ৩০ মে বিক্রি হয়েছে, ১০ জুনের আসনের টিকিট ৩১ মে বিক্রি হয়েছে, ১১ জুনের আসনের টিকিট ১ জুন বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ জুনের আসনের টিকিট ৩ জুন, ১৪ জুনের আসনের টিকিট ৪ জুন এবং ১৫ জুনের আসনের টিকিট ৫ জুন বিক্রি হবে। ঈদের পরে ৭ দিনের ট্রেনের আসনের টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় কেনা টিকিটগুলো যাত্রীরা রেলওয়েকে ফেরত দিতে পারবেন না। প্রতিজন টিকিট প্রত্যাশী ৪টি আসনের টিকিট একবারে একসঙ্গে কিনতে পারবেন। একটির বেশি আসনের টিকিট কিনলে সহযাত্রীদের নাম টিকিট কেনার সময় লিখতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ